টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়া এক কলেজ শিক্ষার্থীকে (২২) ধর্ষণ করে গর্ভবতী করার অভিযোগ উঠেছে।
মামলা সূত্রে ও ভুক্তভোগী নারী জানায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২২ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই তরুণী ২ সেপ্টেম্বর আরাফাত হোসেনকে প্রধান করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইল আদালতে মামলা করেছেন।
আরাফাত হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার ওই যুবতীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়। আরাফাত ফেসবুকে বিভিন্ন প্রকার হাদিস এবং ইসলামী ঘটনা পোস্ট করে যুবতীকে পাঠাতেন। পরে আরাফাত নানার বাড়িতে আসলে ওই যুবতীর সঙ্গে যোগাযোগ হতো। একদিন আরাফাত ওই নারীকে মির্জাপুর উপজেলার কাকলী মোড়ের গোল্ডেন স্পন হোটেলে আসতে বলে। আরাফাতের কথা মতো হোটেলে যান ওই নারী। এক পর্যায়ে আরাফাত হোটেলের ওয়াশরুমে তার ফোনের ক্যামেরা অন করে রাখে এবং গোপনে ওই নারীর নগ্ন ছবি ধারণ করে।
আরাফাত হোসেন উপজেলা শহরের হিফজুল কোরআন মাদরাসায় চাকরি করতেন। এ ছাড়া তরুণী চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন বলে জানা গেছে।
২৮ ডিসেম্বর আরাফাত ওই তরুণীকে তার কথিত বোন শহীদ মিনার সংলগ্ন আব্দুস সামাদের ভাড়াটিয়া লাকী আক্তারের বাসায় নিয়ে যান।
বাসায় যাওয়ার পর লাকী আক্তার ওই নারীকে আরাফাতের সঙ্গে বিয়ের কথা বলে।
পরে লাকি আক্তার কৌশলে ওই নারী এবং আরাফাতকে অন্য একটি রুমে বসতে দিয়ে চলে যায়। এ সময় আরাফাত মোবাইলে ধারণ করা নগ্ন ছবি দেখিয়ে ওই নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য প্রস্তাব দেয়। তখন ওই নারী শারীরিক সম্পর্ক করতে না চাইলে পাশের রুম থেকে লাকী আক্তার ওই নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বলে।
ওই নারী এতে রাজি না হওয়ায় লাকি আক্তার পিছন দিক থেকে তার হাত ও মুখ চেপে ধরে বিছানায় ফেলে দেয়। পরে আরাফাত ওই নারীকে ধর্ষণ করে। একই সময়ে লাকি আক্তার ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। এরপর ঘটনাটি কাউকে জানালে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে ভাইরাল করার হুমকি দেয় আরাফাত।
ওই নারী বলেন, ধর্ষণের পর বিয়ের প্রলোভন এবং মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ডিলিট করে দিবে বলে জানান আরাফাত। এরপর আমাকে বিয়ে করবে এবং বাড়িতে কাজী আসার কথা বলে আবার লাকী আক্তারের বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার গোপন ছবিগুলো ডিলিট করে দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার জানাই এবং পুলিশকে ফোন দিয়ে ঘটনার সর্ম্পকে অবগত করার কথা বললে তারা আমার ফোন কেড়ে নেয়। পরে আবারও লাকী আক্তারের সহযোগিতায় আরাফাত আমাকে ধর্ষণ করলে আমি এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে আমি জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। বিষয়টি আরাফাতকে জানালে তার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানাবে বলে আমাকে জানায়। পরে আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কৌশলে তার পরিবারের লোকজন আমাকে আদর যত্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে নানা প্রকারের খাবার খাওয়ায়। পরে সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমার পেটে ব্যথা শুরু হয়। এরপর মির্জাপুর আধুনিক হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে জানতে পারি আমার ভ্রূণ পড়ে গেছে।’
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, তারা আমাকে মিথ্যা কথা বলে খাবারের মধ্যে ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছে। আমি এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেছি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিচারের দাবি করছি।
অভিযুক্ত আরাফাত হোসেন ও বাবা ফরহাদ মোল্লার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ওই নারী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।