পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নিয়োগ পত্রবিহীন উদ্যোক্তা সবুজ আলীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) উদ্যোক্তারা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, সবুজ আলী সরকারি সেবা তো দূরের কথা, উল্টো জনগণকে হয়রানি ও প্রতারণা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, তৎকালীন চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম তালুকদার (ডাকনাম বাবা সুমন) রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সবুজ আলীকে উদ্যোক্তা হিসেবে বসান। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই—প্রায় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে ধারণা করা হয়।
সবুজ আলী নাকি উদ্যোক্তা হয়েও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মতো আচরণ করছেন। চেয়ারম্যান বা প্রশাসক উপস্থিত না থাকলে সব কাজ তিনিই করেন। ইউনিয়নের সরকারি সেবার নানা কার্যক্রমে তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ—যেমন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ভিজিডি কার্ড, মাতৃত্বকালীন ভাতা, সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন।
৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ঝন্টু আলী সরকার বলেন,“সবুজ মোল্লা কতটুকু পড়াশোনা করেছেন জানি না, সম্ভবত পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। আগে ভেবেছিলাম গরিব মানুষ চাকরি করে সংসার চালাবে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সে ইচ্ছেমতো কাজ করছে। প্রশাসক পরিষদে না থাকলে সব কাজ একাই সামলায়। কয়েকদিন আগে দেড়শ লোক অপেক্ষা করছিল, উদ্যোক্তা দেরি করে আসে। আমি প্রতিবাদ করলে লোকজনের সামনে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।”
২নং ওয়ার্ডের সদস্য খাইরুল ইসলাম বলেন,“আগের উদ্যোক্তা ভালো ছিলেন। সাবেক চেয়ারম্যান জোর করে তাঁকে সরিয়ে সবুজ মোল্লাকে বসিয়েছেন। সে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন কাজে বারবার ভুল করে। জনগণকে উপজেলা অফিসে ঘুরতে হয়।”
ডেমরা ইউনিয়নের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জমিন উদ্দীন পুঙ্গলী ইউনিয়নে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করা সময়ে তার বিরুদ্ধেও বড় ধরনের দুর্নীতি ও অর্থ লুটের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, জন্মনিবন্ধন ও নামের বানান সংশোধনের জন্য তিনি বারবার টাকা নিয়েছেন, মানুষের সঙ্গে আচরণও ছিল রূঢ়।
ডেমরার স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন,আমাদের সাবেক এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা জন্ম নিবন্ধন থেকে যে টাকা লুটপাট করছে তারই তো কোন হিসাব নেই।জন্ম নিবন্ধনে নামের বানান ভুল করলে সংশোধন করতেও টাকা নিতো মোটা অংকের।একটা ইউনিয়ন পরিষদে কি কম কাজ হয় সকল কিছুতেই অর্থ লুটপাট করেছে এইটা দেখারও কেউ ছিলো না।
ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা জমিন উদ্দীনের মুঠোফোনে কল দিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বেঁধে রাখার হুমকিও দেন।
উদ্যোক্তা সবুজ আলীর দূর্নীতি অনিয়ম ও নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়ে বলেন,আমরা উদ্যোক্তা হইতো চুক্তিভিত্তিক,আপনাকে যেটা বলা হইছে সেইটা দিয়ে সংবাদ করছেন একশো একশো বলে স্বীকার করলেন।জনপ্রতিনিধিদের জনপ্রিয়তা আছে বলেই নির্বাচন করছে।
উদ্যোক্তা হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বর্তমান ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,প্রথমে উদ্যোক্তা নিয়োগের শর্ত ছিলোএসএসসি পাশ এবং পরবর্তীতে এইচ,এস,সি অথবা ইন্টার পাশ নেওয়া হয়।
ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানাউল মোর্শেদ বলেন,“উদ্যোক্তার ব্যাপারে অভিযোগ থাকলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগকারী জানান, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হলেও, এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি, সার্টিফিকেটবিহীন উদ্যোক্তা সবুজ আলী দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের নানা কাজে একক কর্তৃত্ব চালাচ্ছেন এবং জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছেন। লিখিত অভিযোগের পরও প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ না হওয়ায় দিন দিন এলাকাবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে।