ভেজাল পণ্য ও অবৈধ কারখানায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ পাবনা জেলায় বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও তার বাস্তব সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। ক্ষণিকের জরিমানায় থেমে নেই ভেজাল কারবারিরা। বরং জরিমানার পর আরও শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিভিন্ন কারখানা ও দোকানে আগের মতোই চলছে ভেজাল তেল, রঙ মেশানো ডাল, ভেজাল ঘি, ধানের নিষিদ্ধ বীজ, অতিরিক্ত দামে বিক্রি হওয়া চালসহ নানা ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের উত্পাদন বাণিজ্য। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় ক্রেতারা বলেন, জরিমানা করলে শুধু টাকার অঙ্কটাই কমে, কিন্তু সিন্ডিকেটের মূল শক্তি বা ভেজাল বাণিজ্য একটুও কমে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি জরিমানার পাশাপাশি অবৈধ ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করে দিত, তাহলে এসব পণ্য বাজারে আসার সুযোগই থাকত না।
বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বিক্রয় প্রতিনিধিদের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত ছোট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করছে ঠিকই, কিন্তু বড় বড় মিল ও কারখানা মালিকদের জরিমানা করলেও তাদের তেমন কোনো বাস্তব ক্ষতি হয় না। তারা ভেজাল পণ্য বিক্রি করেই জরিমানার টাকাও উঠিয়ে নেন। যদি এসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হতো এবং সঙ্গে যথাযথ আইনে মামলা হতো তাহলেই প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিত হতো।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, মুদি দোকানদারকে জরিমানা করলে সেটা তার জন্য কঠিন শাস্তি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বড় কোম্পানির মালিকদের জরিমানায় কোনো প্রভাব পড়ে না। সমুদ্র থেকে এক বালতি পানি তুললে যেমন ফুরায় না, বড় কোম্পানির অবস্থাও তাই। প্রকৃত শাস্তি তখনই হয়, যখন ভেজাল বা অবৈধ উৎপাদনের দায়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, পাবনায় এখন পর্যন্ত ভেজালের দায়ে কোনো বড় কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার নজির নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে সিলগালা করা হলেও পরে আবার চালু হয়ে গেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং ভেজাল ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক আরও শক্ত হয়েছে। ভোক্তাদের প্রশ্ন জবাবদিহি কোথায়?
স্থানীয়রা মনে করেন, শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক জরিমানার মাধ্যমে ভেজাল দমন সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ এবং কঠোর জবাবদিহিতা না থাকলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।