দেবী দুর্গা প্রতি বছর কৈলাসের স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যে তাঁর বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন এবং বিজয়া দশমীর পর বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে শ্বশুরালয় কৈলাসে ফিরে যান।
দেবী দুর্গা গজে (হাতি) আগমন করেছেন এবং দোলায় (পালকি) গমন করবেন। গজে দেবীর আগমন শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্যশ্যামলা পৃথিবীর প্রতীক, যা শুভ বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে, দোলায় দেবীর গমন মহামারী, ভূমিকম্প এবং অতিমৃত্যুর প্রতীক, যা অশুভ ইঙ্গিত বহন করে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এদিন শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে। দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেও বাঙালি জীবনে গভীরভাবে প্রোথিত। দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন থেকে দশমী পর্যন্ত দিনগুলো প্রতিটি মানুষ আনন্দ-উল্লাসে ভরপুর থাকে।
শাস্ত্র মতে, দেবী দুর্গা অসুর মহিষাসুরকে বধ করে ধর্ম ও ন্যায়ের জয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তাই বিজয়া দশমী ন্যায়, সত্য ও শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। সকাল থেকে দেবীর পূজা-অর্চনা শেষে বিকেলে হয় প্রতিমা বিসর্জন। ভক্তরা চোখের জলে “আসছে বছর আবার হবে” ধ্বনি তুলে মাতৃমূর্তিকে বিদায় জানান। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদোৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হলেও বাঙালির হৃদয়ে উৎসবের আবহ বহমান থাকে।
আজ বিজয়া দশমীতে অনেক মন্দিরেই দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনের পরে সিঁদুরখেলার আয়োজন থাকবে। সাধারণত এ আয়োজনে বিবাহিত নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর দান করে তা কৌটায় ধারণ করেন সারা বছর ব্যবহারের জন্য। এ সময় তাঁরা একে অন্যের কপাল ও চিবুকে দেবীর চরণ স্পর্শ করা সিঁদুর লাগিয়ে দেন।
গতকাল বুধবার (১অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজার নবমীতেই দেবী দুর্গা তীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অসুর বিনাশ করেন। মহিষাসুর বধের এই বিজয় দিবসটি তাই দেবীভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেবী এই দিনে ভক্তদের মনোবাসনা পূরণ করেন। নবমীর প্রধান ধর্মীয় আচার হলো অসুরবিনাশী দেবীকে অঞ্জলি নিবেদন।
আজ বিভিন্ন পূজা মন্ডপে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল, কালিহাতী, মধুপুর, ধনবাড়ী, দেলদুয়ার, বাসাইল, সখিপুর সহ বিভিন্ন মণ্ডপে ভক্তরা ফুল হাতে দেবীপদে এই অঞ্জলি নিবেদন করেন।
সর্বোপরি, বিজয়া দশমী আমাদের শিখিয়ে যায় অশুভ যত শক্তিই প্রবল হোক না কেন, শুভ ও সত্যের জয় নিশ্চিত। এই শিক্ষা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। তাই শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বিজয়া দশমী হয়ে উঠেছে আনন্দ, ভালোবাসা ও মানবিকতার মহোৎসব।