ভোলার মনপুরা উপজেলায় মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলেদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া সরকারি ভিজিএফ চাল প্রকৃত জেলেদের হাতে না পৌঁছে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসের কর্মচারীদের বাসায়। বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ইউএনও অফিসের কর্মচারীরা খাদ্য গুদাম থেকে এসব চাল নেওয়ার সময় স্থানীয়রা চার বস্তা সরকারি চাল আটক করে।
পরে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে আরও তিন বস্তা চালসহ মোট সাত বস্তা সরকারি চাল জব্দ করে উপজেলা খাদ্য গুদামে জমা দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৪টার দিকে ইউএনও অফিসের কয়েকজন স্টাফ উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে সরকারি ভিজিএফ চাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে সন্দেহ হলে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে জানা যায়, এসব চাল আসলে জেলেদের বরাদ্দ। এরপর তারা চালগুলো আটক করে প্রশাসনকে খবর দেন।
উপজেলা খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, মনপুরা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রশাসকরা ইউএনও অফিসের স্টাফদের নামের তালিকা তৈরি করেন। তা হলো
হাজিরহাট ইউনিয়ন প্রশাসক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক ইউএনও অফিসের ১১ জন স্টাফের জন্য ২৫ কেজি করে ২৭৫ কেজি চাল বরাদ্দ দেন।
মনপুরা ইউনিয়ন প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান ইউএনও অফিসের ১২ জন স্টাফের জন্য ৫০ কেজি করে ৬০০ কেজি চাল বরাদ্দ করেন।
কলাতলী ইউনিয়ন প্রশাসক ও এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ১৩ জন স্টাফের জন্য ২৫ কেজি করে ৩২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দেন।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন প্রশাসক ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফ হোসেন ১৩ জন স্টাফের জন্য ২৫ কেজি করে ৩২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দেন।
স্থানীয় জেলে মোঃ নাজিম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর আমাদের জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও অনেক সময় তারা সেই সহায়তা পান না।
তাদের অভিযোগ, এবারও প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি নিজেদের নাম ব্যবহার করে জেলেদের চাল আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন।
একজন ক্ষুব্ধ জেলে বলেন, “আমদের জন্য সরকার সহায়তা দেয়—সেই চালও যদি আমারা না পাই তাহলে আমরা কি খেয়ে বাঁচব।
কবির নামে এক জেলে বলেন, আমরা নদীতে মাছ ধরি অথচ আমরা জেলেদের চাল পাইনা।আর ইউএনও অফিসের কর্মচারীদের ঘরে সেই চাল যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ বা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের আর কি অবস্থা হবে।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন ইউএনও অফিসের ১১ জন স্টাফের জন্য ২৫ কেজি করে ২৭৫ কেজি চাল বরাদ্দ দেন।
সব মিলিয়ে ইউএনও অফিসের স্টাফদের নামে ১ হাজার ৮০০ কেজির বেশি সরকারি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের প্রশাসক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, আমি আমার ইউনিয়নের জেলেদের চাল ১৫ দিন আগেই দিয়েছি।”সাংবাদিকরা জানতে চান, ইউএনও অফিসের স্টাফদের কি সরকারিভাবে চাল দেওয়া যায়? উত্তরে তিনি বলেন, না দেওয়া যায় না।
অন্যদিকে হাজিরহাট ইউনিয়নের প্রশাসক ফজলুল হক প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে বলেন, আমি ঈদ ভিজিএফ থেকে পরে সমন্বয় করব।
এব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে চাল আটকের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত কাউকে পাওয়া না গেলেও সাত বস্তা সরকারি চাল জব্দ করে খাদ্য গুদামে সংরক্ষণ করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা এ ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং যারা সরকারি খাদ্য সহায়তা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।